“জুয়েলারি দোকান মালিকরা মূসক (ভ্যাট) দিবে আবার ঘুষ দিয়ে লাইসেন্সও করবে : সম্পাদক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতি
“তদারকি করি চাপ দেয়া হয় কিছু কিছু আদায় করা হয় সব তো সম্ভব হয় না : রাজস্ব কর্মকর্তা
সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
শহরের কালির বাজার সহ জেলা জুড়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফাঁকির মহা উসৎব চলছে। সরকারের নির্ধারিত রাজস্ব ৫ শতাংশ মূসক (ভ্যাট)পরিশোধ করছেন না সম্পন্ন ব্যবসায়ীরা। শুধু মাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে কিছু পরিমানে ভ্যাট প্রদান করছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ৮৫ টি জুয়েলারি দোকানের মধ্যে কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট লাইসেন্স নেই বেশিরভাগ জুয়েলারি দোকানের।
প্রতিবছর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের মূসক (ভ্যাট) থেকে। এছাড়া কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের তদারকি না করার বিষয়ে একাধিক অভিযোগও রয়েছে।
ক্রেতারা জুয়েলারি কেনার মূসক (ভ্যাট) প্রদান করেন কিন্তু কোন ধরনের মূসক (ভ্যাট) রশিদ প্রদান করেন না ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন একাধিক ক্রেতা। তবে বিক্রেতাদের দাবী ক্রেতারা মূসক ভ্যাট প্রদান করতে চান না তাই মূসক (ভ্যাট) ভরতুকি দিতে হয়।
সরেজমিনে কালির বাজারের জুয়েলারি মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা যায়, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জুয়েলারি বিক্রি করছেন কিন্তু মূসক (ভ্যাট) রশিদ দিচ্ছেন না। এছাড়া ভ্যাট গ্রহনের পর জুয়েলারি দোকানের (ক্যাশ মেমো) চালানের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়। তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরাদের দাবি ক্রেতারা স্বর্ণ কেনার পর মূসক (ভ্যাট) প্রদান করতে চায় না। তাই ক্রেতার পরির্বতে স্বর্ণ ব্যবসাীদের ভূরতুকি দিতে হচ্ছে প্রতিমাসে। যে সকল ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হয় তাতে স্বর্ণের মূলের সাথে ক্যাশ চালানে উল্লেখ করে দেয়া হয় অথবা রশিদ দেয়া হয়। যদিও কয়েকটি জুয়েলারি দোকানে ভ্যাট রশিদ রয়েছে জানালেও দেখাতে পারেনি।
অপরদিকে, “লাইসেন্স অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা থাকলেও ভ্যাট অফিসারদের টাকা ঘুষ না দিলে লাইসেন্স করে না। জুয়েলারি দোকান মালিকরা ভ্যাট দিবে আবার ঘুষ দিয়ে লাইসেন্সও করবে! এ কারনে কেউ লাইসেন্স করতে চায় না। যে টাকা দিবে তার ফাইল হবে। আর এ কারনে সরকার ১০০ শতাংশ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে নিশ্চত করে জানান কালির বাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কমল দে।
তিনি দৈনিক সংবাদচর্চা আরো জানায়, সরকারি নিয়ম হলো যদি স্বর্ণ এক বরি ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে ৫ শতাংশ হারে ২৫শত টাকা মূসক (ভ্যাট) দিতে হবে সরকারকে। এছাড়া আমরা যদি ২৫শ’ টাকা ভ্যাট নেই তাহলে ২৫শ’ টাকার আলাদা রশিদ প্রদান করতে হবে ক্রেতাকে। তবে ভ্যাট অফিসের রশিদের যে সিস্টেম আছে তা আমরা এখনও পর্যন্ত বুঝি না। কারন আমাদের স্বর্ণ ডির্পাটমেন্টে সবচেয়ে শিক্ষিত কম। তাই আমাদের মার্কেটে খাতা পত্র মেনটেইন করা কঠিন। যে কারনে আমরা অনুমানের উপর ভিত্তি করে ভ্যাট দিয়ে দিচ্ছি প্রতি মাসে।
সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, আমাদের এখানে (কালির বাজার) দোকান হল ৮৫ টি আমরা ভ্যাট দেই ৩০ থেকে ৩৫ টি জুয়েলারী দোকানী। বাকিদের লাইসেন্স নেই। আমরা যখন ১৫ বছর আগে দোকান দিয়েছি তখন কর্মকর্তরা এসে লাইসেন্স করে দিয়েছে। তবে এখন অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা থাকলেও অফিসারদের টাকা ঘুষ দিয়েও লাইসেন্স করা যাচ্ছে না। জুয়েলারি দোকান মালিকরা ভ্যাট দিবে আবার ঘুষ দিয়ে লাইসেন্সও করবে! এ কারনে কেউ লাইসেন্স করতে চায় না। যে টাকা দিবে তার ফাইল হবে। আর এ কারনে সরকার ১০০ শতাংশ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । আমরা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট নারায়ণগঞ্জ সার্কেল অফিসকে বলেছি ১০০ শতাংশ জুয়েলারি দোকান আপনারা ভ্যাটের আওতায় আনেন”।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে বিভাগীয় ও কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট নারায়ণগঞ্জ সার্কেল র্কাযালয়ে গিয়ে কালির বাজার জুয়েলারির বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত কর্মর্কতা ও কর্মচারিরা বলেন, বিভাগীয় অফিসে যান এখানে কিছু নাই ! বিভাগীয় অফিসে গেলে বলেন, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট নারায়ণগঞ্জ সার্কেল অফিস উপরে সেখানে যান এখানে আজ কর্মকর্তা নাই !
পরবর্তিতে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা মো.মুনজুরুল হকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানায়,“স্বর্ণ বিক্রেতা জুয়েলারি মালিকরা ৫ শতাংশ ভ্যাট দেয়। বিক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রেতাদের রশিদের মাধ্যমে কি ভ্যাট আদায় করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে দেখি যেটা সন্দেহ হয় সেটা দেখি। তদারকি করি চাপ দেয়া হয় তাদের কিছু কিছু আদায় করা হয়। সব তো সম্ভব হয় না। এছাড়া তিনি আরো জানায় ছোট ছোট দোকান কেউ বলে আমরা এমিটেশন বিক্রি করি। কেই বলে আমরা ওমুক-তমুক বিক্রি করি। অভিযোগ থাকলে একটিকে ধরতে আমাদের পাঁচদিন-সাতদিন সময় লাগবে। এজন্য তেমন একটা কিছু করা হয় না। তবে প্রতিমাসে ভ্যাট আদায় করা হয় চালানের মাধ্যমে”।
উল্লেখ্য, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যবসাই করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। গত ১০ (এপ্রিল) বুধবার ঢাকা সেগুনবাগিচায় এনবিআরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চলমান প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।